১১শ টাকার সঙ্গে তিনবেলা খাবার দিয়েও শ্রমিক মিলছে না

বোরো মৌসুমে কুমিল্লায় দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধান৷ ফলন ভালো হলেও স্বস্তিতে নেই কৃষক ও গৃহস্থরা। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় মাঠের পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কুমিল্লায় কৃষি শ্রমিকদের সংকট দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে কৃষি শ্রমিকরা তাদের মজুরি বাড়িয়েছে। এক দিনের জন্য প্রতি শ্রমিককে তিনবেলা খাওয়াসহ ১ হাজার ১০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
এতে সময়মতো পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন গৃহস্থরা। এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই মাঠে নেমেছেন ধান কাটতে।
কুমিল্লায় কৃষি শ্রমিকের বড় হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে সেনানিবাসের কাছের টিপরা বাজার, সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা, সুয়াগাজী, বুড়িচংয়ের ভরসার বাজার, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড ও পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড। কাকডাকা ভোরে হাটগুলো থেকে শ্রমিকরা ছড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন উপজেলায়।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২০৭ হেক্টর জমি।
এখন পর্যন্ত জেলায় মোট আবাদের ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে চলতি সপ্তাহে পুরো ধান কাটা হয়ে যাবে।
জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের কৃষক মনু মিয়া। এবার ১২০ শতক জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। ধান ভালো হয়েছে। ছেলে সৌদি আরব থেকে যে টাকা পাঠায় তার কিছুটা দিয়ে জমি চাষ করেন। বাকি টাকা জমা রাখেন।
মনু মিয়া বলেন, ‘এককানি (৪০ শতক) খেত করলে ট্রাক্টর, পানি, কামলা, সার, ওষুধসহ ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাগে। ধান হয় ২০ মণ। ৯০০ টাকা প্রতি মণ ধান বিক্রি করলে এককানি খেতের ধানের দাম আসে ১৮ হাজার টাকা।
এর মধ্যে ধান লাগানো, খেতের আগাছা বাছা, ধান কাটাসহ কামলারে দিতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। চাষ করে যা পাই তার অর্ধেকটাই দিতে হয় কামলাদের।
কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে বুড়িচং উপজেলার কৃষকরাও। এখন তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ধান কেটে বাড়ি আনছেন। নারী সদস্যরা ধান মাড়াই, সিদ্ধ করাসহ ধান ও খড় শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বুড়িচং পয়াত গ্রামের কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘এক কামলাকে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ করে টাকা দিতে হয়। আবার তিনবেলা খাবার দিতে হয়। ৫ কানি খেত করেছি। এই ৫ কানি খেতের ধান কেটে বাড়ি আনতে ৪ জন কামলার ৪ দিন লাগবে। তাদের ১৭ থেকে ১৮ হাজার টেহা দেয়া লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘এত টাকা দিতে পারব না। তাই ছেলে-মেয়ে আর বউ নিয়ে কাজ করতেছি। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কেটে সিদ্ধ করে ঘরে তুলতে পারব।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত