১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সুপারিশ
সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষণার পর ছয় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নবম পে-স্কেল ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ এবং ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসকল দাবীগুলোর যোক্তিকতা পর্যালোচনা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ এর উপসচিব জুবাইদা মান্নান স্বাক্ষরিত এক গোপনীয় প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, অষ্টম পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় শতভাগ বৃদ্ধি করা হয়। তবে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়। এ কারণে কর্মচারীদের মধ্যে বিশেষত ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে স্কেল বাস্তবায়নের শুরু থেকেই অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়। তাদের সংগঠন ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ বিভিন্ন সময় টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতনের গ্রেড সংখ্যা হ্রাসের দাবিতে আলােচনা সভা, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে। সর্বশেষ অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্থায়ী বেতন কমিশন এবং ছয় বছর অতিবাহিত হলেও নতুন বেতন কমিশন গঠিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন নবম বেতন কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে।
প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম ও সর্বশেষ পে-স্কেলের পর প্রায় ছয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। ইতমধ্যে মূল্যস্ফীতি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য। গত ছয় বছরে বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি কর্মচারী বিশেষত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়ছে। ফলে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন পে-স্কেলের দাবিতে নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের পাচ দফা দাবির বিষয়টি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষাধীন রয়েছে। সংগঠনটির নেতৃবৃন্দের সূত্রে জানা যায় তাদের দাবির বিষয়ে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া না গেলে তারা নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ তার পূর্ব ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি শেষে যে কোন সময় ঢাকার মহাসমাবেশসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলে জানা যায়।
উভয় সংগঠনের দাবি প্রায় অভিন্ন হওয়ায় তারা ঐক্যবদ্ধভাবেও আন্দোলন করতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। বর্তমানে উল্লিখিত আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সরকারি কর্মচারীদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলে ও নতুন পে-স্কেলের দাবিটি সরকারি কর্মচারীদের নিকট জনপ্রিয় হওয়ায় তারাও বৃহত্তর আন্দোলনে যোগ দিতে পারে এবং সারাদেশের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন করলেও দলটির প্রধান লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সুবিধা আদায়। ফলে বিএনপি-জামায়াতসহ স্বার্থান্বেষী মহল সরকারি কর্মচারীদের দাবিগুলােকে পুঁজি করে এবং তাদের ইন্ধন ও উস্কানি দিয়ে ১৯৯৬ সালে গঠিত জনতার মঞ্চের ন্যায় বড় কোন আন্দোলন গড়ে তোলার অপচেষ্টা চালাতে পারে ।
সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নতুন বেতন কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তারা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে নিজ কর্মস্থলের বাইরে গিয়ে সভা-সমাবেশ ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। যা চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীর বিভাগীয় শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধির পরিপন্থী ।
এগুলো বিবেচনা করে ৬ দফা সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সুপারিশগুলো হলো- ভবিষ্যতে নতুন পে-স্কেল প্রণয়নকালে এক ধাপে প্রায় দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধি না করে কয়েক ধাপে পর্যায়ক্রমে বেতন বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের দাবিসমূহের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করা যেতে পারে । মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন মহার্ঘ ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। সরকারি কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘিত হয় তাদের এমন যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।বিএনপি-জামায়াতসহ সরকার বিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল যাতে আন্দোলনকারীদের উস্কানি ও মদদ দিয়ে সরকারকে বিব্রত ও প্রশাসনিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা যেতে পারে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত