১২ লাখ টাকায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় পাস!
পটুয়াখালীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। এরই মধ্যে চাকরিপ্রত্যাশী এক পরীক্ষার্থী ও জালিয়াত চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই চাকরিপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি একটি চক্রের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেন। এর জেরে প্রপি পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার মির্জাগঞ্জের মো. বেলায়েত হোসেনের ছেলে চাকরিপ্রার্থী আল-মামুন (২৮) ও বাউফলের কৌখালীর সুলতান সিকদারের ছেলে জালিয়াত চক্রের সদস্য এনামুল কবির (৩৫) এখন পটুয়াখালীর জেলহাজতে রয়েছেন।
এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে গত ২৫ জুলাই পটুয়াখালী সদর থানায় একটি মামলা করেন। তবে ঘটনাটি এতদিন আড়ালেই ছিল। মামলার আসামি মো. বুলবুল ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি লালমনিরহাট জেলায়। অন্য তিনজনের বাড়ি জেলার বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮ জন রয়েছেন। পুলিশ জালিয়াত চক্রের সদস্যদের খুঁজছে।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা একটি বিশাল চক্র। তাঁরা মোটা অঙ্কের অর্থের চুক্তিতে সদ্য অনুষ্ঠেয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রপি দিয়ে প্রত্যাশিত প্রার্থীকে পাস করিয়ে দেন। আসামি মো. এনামুল কবির ও মো. বেল্লাল হোসেন খান যোগাযোগ করে প্রার্থী ঠিক করেন এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছেন। চুক্তি হলে বুলবুলকে দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় প্রপি দিয়ে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বুলবুলকে প্রতি পরীক্ষার্থী বাবদ দেওয়া হয় ১ লাখ টাকা।
এমনিভাবে এ চক্রটির খপ্পরে পড়েন মির্জাগঞ্জের আল-মামুন। লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি এনামুল ও বেল্লালের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তি করেন এবং এরই মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধও করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গত ২০ মে অনুষ্ঠেয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় বুলবুলের প্রপিতে তিনি উত্তীর্ণ হন। তবে গত ২৫ জুলাই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সামনে এসে ধরা পড়েন তিনি। পরে স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসতে থাকে নানা তথ্য।
মামলার বাদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান বলেন, মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সামনে আল-মামুন হাজির হলে তাঁকে কিছু একটা লিখতে দেওয়া হয়। এতে দেখা যায় লিখিত পরীক্ষার ওএমআর শিটের সঙ্গে মামুনের হাতের লেখা মিলছে না। এর পর জিজ্ঞাসাবাদে মামুন স্বীকার করেন, লিখিত পরীক্ষায় তিনি অংশ নেননি। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চক্রের সদস্য এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পটুয়াখালী থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তার দু’জনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আরও ৪ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭-৮ জনকেও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত