২৫ ব্যাংকে বিপিসির ১৬ লাখ ৩৪১ কোটি টাকার এফডিআর
দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজেদের সঞ্চিত অর্থ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি এফডিআর আকারে জমা রাখে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এর বাইরে রয়েছে ব্যাংকে রাখা নগদ অর্থও। ব্যাংকিং সূত্র বলছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নগদ অর্থের পরিমাণ কিছুটা কমলেও দীর্ঘমেয়াদি আমানত ও নগদ জমাকৃত অর্থের বিবেচনায় দেশে ব্যাংকের একক ধনী গ্রাহক রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটিই।
সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ১৩ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি আমানত হিসেবে জমা রেখেছে বিপিসি। আর দেশের বেসরকারি ২১টি ব্যাংকে স্বল্পমেয়াদি আমানত হিসেবে জমা রাখা হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এর বাইরেও জ্বালানি তেল বিক্রি বাবদ ১৫ হাজার ৮২২ কোটি টাকা নগদ ছিল বিপিসির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে। সব মিলিয়ে গত বছরের ৩০ জুন বিপিসির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ২০২০-২১ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২০২১ সালের ৩০ জুন বিপিসির হাতে যে পরিমাণ অর্থ ছিল ২০২২ সালের জুনে দীর্ঘমেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে তার খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে নগদ অর্থ কিছুটা কমেছে। বিপিসির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির হিসাব পরিচালনাকারী ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যেই তা দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের ১২ জুন তৈরি বিপিসির একটি প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট ২৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা জমা ছিল। এর মধ্যে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর ১৪ হাজার ১০৬ কোটি টাকা ছিল মেয়াদি আমানত হিসাবে। দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি এসব আমানত থেকে বড় অংকের সুদ আয়ও পায় বিপিসি।
বিপিসিতে নগদ অর্থের কোনো সংকট রয়েছে কিনা জানতে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কয়েক দফায় তার সেলফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিপিসির শীর্ষ পর্যায়ের অন্য কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
জ্বালানি তেল আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খোলে বিপিসি। এ কারণে চারটি ব্যাংকেই দীর্ঘমেয়াদি আমানত জমা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত জমা আছে জনতা ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকে রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত। আর রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকে ২ হাজার ৭৩৫ কোটি ও রূপালী ব্যাংকে ২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত জমা রাখা হয়েছে। এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবিতে জমা রয়েছে বিপিসির ৪৮১ কোটি টাকার আমানত। সব মিলিয়ে সরকারি চার ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা জমা রেখেছে বিপিসি। মেয়াদি আমানতের এ হিসাব গত বছরের ৩০ জুনের। চলতি বছরেও এ ব্যাংকগুলোয় বিপিসির আমানত প্রায় সমপরিমাণই রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মুনাফার অর্থ থেকে স্বল্পমেয়াদি আমানত হিসাবে বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে অর্থ বিনিয়োগ করেছে বিপিসি। এর মধ্যে এবি ব্যাংকে ২০১ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৬৯, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ১৭১, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ১০, কমিউনিটি ব্যাংকে ৫৬, এক্সিম ব্যাংকে ৬৩, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৬২৪, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ৮১, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে ১০১, আইএফআইসি ব্যাংকে ৭১, মেঘনা ব্যাংকে ৫০ ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি আমানত রয়েছে। এছাড়া এনআরবি ব্যাংকে ৩১ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৩৭৮, ওয়ান ব্যাংকে ৬২, পূবালী ব্যাংকে ২৪, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ১৬১, সাউথইস্ট ব্যাংকে ১৩১, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৫১ ও ইউনিয়ন ব্যাংকে ৩৫৯ কোটি টাকার স্বল্পমেয়াদি আমানত রেখেছে বিপিসি। এ হিসাবও গত বছরের ৩০ জুনের। চলতি বছরে কিছু ব্যাংকে বিপিসির স্বল্পমেয়াদি আমানতের পরিমাণ কমেছে আর কিছু ব্যাংকে বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বিপিসি দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। প্রতিদিনই প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এ কারণে বিপিসির কাছে সবসময় বড় অংকের অর্থ জমা থাকে। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে বর্তমানেও বিপিসির ১০০ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত এবং ১৬০ কোটি টাকার শর্ট নোটিসের আমানত রয়েছে।
বিপিসির হাতে থাকা নগদ অর্থ রাখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। যদিও গত বছর তা ছিল ১৫ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। মুনাফার পরিমাণ কমায় বর্তমানে নগদ এ অর্থের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, এবি, ব্র্যাক, ইস্টার্ন, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আইএফআইসি, ইসলামী, যমুনা, মেঘনা, মার্কেন্টাইল, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনআরবি, এনআরবিসি, ওয়ান, পদ্মা, প্রিমিয়ার, প্রাইম, সাউথ বাংলা, সাউথইস্ট, দ্য সিটি, ইউসিবি, ইউনিয়ন ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশী খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, সিটিব্যাংক এনএ এবং এইচএসবিসির মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে বিপিসি। প্রতিষ্ঠানটির হাতে থাকা নগদ অর্থ এসব ব্যাংকে জমা হয়।
বিপিসিকে দেশের ধনী প্রতিষ্ঠান মনে করেন দেশের ব্যাংক নির্বাহীরা। তারা বলছেন, বিপিসির হাতে সব সময়ই নগদ অর্থের প্রবাহ থাকে। পাশাপাশি থাকে বিপুল উদ্বৃত্ত অর্থও। এ কারণে ব্যাংকগুলো বিপিসির আমানত পেতে মুখিয়ে থাকে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী নিজ ব্যাংকে থাকা বিপিসির আমানতের তথ্য জানালেও নিজেদের নাম উদ্ধৃত করে বক্তব্য দিতে চাননি।
সূত্র: বণিক বার্তা
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত