‘আইন ধনীদের জন্য বেশি চলে, গরিবের পক্ষে থাকে না’

| আপডেট :  ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৫৪  | প্রকাশিত :  ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:৫৪

আইন ধনীদের জন্য বেশি এগিয়ে চলে। অনেক সময় গরিবের পক্ষে আইন থাকে না। কারণ তারা অর্থ দিতে পারে না। এসব কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘লিগ্যাল এইড ইন বাংলাদেশ: সার্ভ হিউম্যানিটি অ্যান্ড সেভ সোসাইটি’ শীর্ষক সেমিনার হয়।

সেমিনারে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, আইন ধনীদের জন্য বেশি এগিয়ে চলে। এর কারণ হলো ধনীদের অর্থ আছে। তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারে। আইনজীবীর পেছনে অর্থ খরচ করতে পারে। এর কারণে আইন ধনীদের দিকে বেশি ধাবিত হয়। এটাই বাস্তব।

তিনি আরও বলেন, অপরদিকে গরিবের অর্থ না থাকার ফলে আইন তাদের পক্ষে অনেক সময় থাকে না। কারণ তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন না। ফলে তারা ভালো আইন উপস্থাপন করতে পারে না। কিন্তু যারা অর্থ ও সম্পদশালী তারা ভালো আইন, ভালো নজির ও শুনানি উপস্থাপন করতে পারেন। এ কারণে সরকার অসহায়, দুস্থ ও গরিব বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা দেওয়ার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করে বলে জানান হাইকোর্টের এই বিচারপতি।

তিনি বলেন, লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠার পর আজ ২২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু দেশের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইড নিয়ে ধারণা কম। গ্রামের মানুষ এখনো জানে না লিগ্যাল এইড কীভাবে কাজ করে। অনেকে মনে করেন লিগ্যাল এইডের কাছে এলেই মনে হয় রায় পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন লিগ্যাল এইড একটি মাধ্যম, টাকা-পয়সা খরচ করতে হয়। কিন্তু লিগ্যাল এইডের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজেই নিয়েছে। এখানে কোনো বিচারপ্রার্থীর একটি পয়সাও খরচ করার সুযোগ নেই। এজন্য লিগ্যাল এইডের ধারণা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিনিয়তই সেই ভূমিকা পালন করে চলেছে।

জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম আরও বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। কিন্তু আমার মনে পীড়া দেয় আদৌ কী আমরা ইক্যুয়াল প্রটেকশন পাচ্ছি, এটা আপনারা ভেবে দেখবেন। অসহায়, দুস্থ বিচারপ্রার্থীদের কি ঠিকমতো লিগ্যাল সাপোর্ট দিতে পারছি? আমার মতে, পারছি না। এজন্য সম্মিলিতভাবে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ স্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। যদি এটা করতে পারি তাহলে অসহায় ও দুস্থ মানুষকে সহায়তা করতে পারবো। তিনি বলেন, গরু-মহিষ নিয়ে শ্বশুর ও জামাইয়ের দ্বন্দ্ব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সমাজের কিছু কিছু অবক্ষয়ের কারণেই এমন হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে শিক্ষিত জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির প্রসঙ্গ তুলে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে বন্দিদের বক্তব্য শুনেছি। যাদের লিগ্যাল এইড দেওয়া দরকার তাদের নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া কিশোর সংশোধনাগারে গিয়েছি। অপরাধে জড়িয়ে শিশুরা সেখানে বন্দি। এ বয়সে যাদের বাবা-মায়ের কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমাজ সচেতন না হওয়ার কারণে শিশুদের এই দুরবস্থা। তিনি আরও বলেন, আইনজীবী থাকাকালে আমি মহিলা সমিতিতে লিগ্যাল এইডের কাজ করেছি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও মানবতার বিষয়টি এসেছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লায়ন জালাল আহমেদ, লায়ন মোহাম্মদ হানিফ, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা শম্পা ও তামান্না ফেরদৌস প্রমুখ।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত