৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে সুখবর এলো

| আপডেট :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:২০  | প্রকাশিত :  ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:২০

মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জবাবদিহিতা ও কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং জনবল ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বছর পাঁচেক আগে সরকার চালু করে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ)। বছর শেষে প্রকাশিত হয় মূল্যায়ন প্রতিবেদন।

সম্প্রতি ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলতি বছরের এপিএ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নিজস্ব এ মূল্যায়নে ৮৬ শতাংশের বেশি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মদক্ষতা (পারফরম্যান্স) অত্যন্ত ভালো। তারা লেটার মার্কস (৮০-এর বেশি নম্বর) পেয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ১০০ নম্বরের মধ্যে ৯০-এর বেশি নম্বর পেয়েছে। ৮০ থেকে ৮৯ নম্বর পেয়েছে ১৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। বাকি সাতটির নম্বর আশির নিচে, তবে ৬৫-এর বেশি। মূল্যায়নে সবার শীর্ষে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। এই মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত নম্বর ৯৮ দশমিক ৬৬। সবার নিচে অবস্থান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের; তাদের নম্বর ৬৫ দশমিক ৭৬।

তবে এ মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, করোনাকালে মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক কার্যক্রমে গতি কম ছিল। উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও কম হয়েছে। কিন্তু নম্বর পদ্ধতির ধরন সেটি বলছে না।

করোনাকালে আলোচিত-সমালোচিত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নিচের দিকে। তবু এই মন্ত্রণালয়ের আওতায় থাকা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ ৯১ দশমিক ৪০ নম্বর পেয়ে ২৪তম স্থানে আছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৮৯ দশমিক ৬০ নম্বর পেয়ে ২৯তম স্থান পেয়েছে। করোনাকালে

স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় দেড় বছর বন্ধ ছিল। এখনও পুরোদমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। এরপরও এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৯৮ দশমিক ৪২ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় স্থান রয়েছে। একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ অনেক নিচে অবস্থান করছে। এরপরেও ৮৯ দশমিক ৪৬ নম্বর পেয়ে বিভাগটি রয়েছে ৩১ নম্বরে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮২ নম্বর পেয়ে ৪৪তম স্থানে রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংস্কার অনুবিভাগের কর্মসম্পাদন নীতি ও মূল্যায়ন অধিশাখার যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের একশ থেকে দেড়শ সূচক ধরে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মহামারির কারণে এবার তা কমে এসেছে। মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেসব সূচকের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি, সেসব সূচক এপিএ মূল্যায়নে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এতে করে সূচকের মোট বরাদ্দকৃত নম্বর বাদ দিয়ে অবশিষ্ট নম্বরের আনুপাতিক হারে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এপিএতে প্রাপ্ত নম্বর গণনা করা হয়েছে।

উদাহরণ দিয়ে এ যুগ্ম সচিব বলেন, ধরা যাক একটি মন্ত্রণালয়ের তিনটি সূচকে থাকা কার্যক্রম কভিডের কারণে শুরুই হয়নি। অর্থাৎ অর্জন শূন্য। এই তিনটি সূচকের বরাদ্দকৃত নম্বর ৫। সেক্ষেত্রে ওই মন্ত্রণালয়ের এপিএ মূল্যায়ন করা হবে তিনটি সূচকের ওই ৫ নম্বর বাদ দিয়ে। সেক্ষেত্রে নম্বর হবে ৯৫। এই নম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়টি ৯০ নম্বর পেয়ে থাকলে ১০০ নম্বরের মধ্যে কত পায়? পায় ৯৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এপিএ মূল্যায়নে ৪৯তম স্থানে থাকা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মনিরুস সালেহীন সমকালকে বলেন, তাদের মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বেশি কার্যক্রম ছিল বিদেশ-সংক্রান্ত। কিন্তু করোনার কারণে চার মাস আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যায়। এর মধ্যে তারা কাজই শুরু করতে পারেননি। এ কারণে একশ নম্বরের মধ্যে ২২ নম্বর বাদ পড়ে যায়। বাকি ৭৮ নম্বরের মধ্যে হিসাব করে স্কোর নির্ধারণ করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিবের স্কোরিং সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরা জানতে চাইলে সচিব কোনো মন্তব্য করেননি।

কোন মন্ত্রণালয় কোন সূচকে কত নম্বর পেয়েছে, কিংবা কতটুকু কাজ করেছে অথবা করেনি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদনে পাওয়া যায়নি।

কোন মন্ত্রণালয় কোন অবস্থানে :প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং দ্বিতীয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পর এপিএ মূল্যায়নে শীর্ষ ১০-এর মধ্যে পর্যায়ক্রমে কৃষি ৯৭ দশমিক ৯৭ শতাংশ, পানিসম্পদ ৯৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ৯৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ, জনপ্রশাসন ৯৬ দশমিক ০৩ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ৯৫ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং অর্থ বিভাগ ৯৫ দশমিক ৩০ নম্বর পেয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অপর শাখা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ ৯৩ দশমিক ২৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে ১৮তম স্থানে রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে; ৯৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে এ মন্ত্রণালয়টি ১১তম স্থান পেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৯৪ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে ১২তম স্থানে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ৯২ দশমিক ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২১তম স্থানে এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৮৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৩২তম স্থানে রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তিন বিভাগের মধ্যে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ ৯২ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে ২০তম স্থানে আছে। অপর দুই বিভাগের মধ্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৮৭ দশমিক ০৮ নম্বর পেয়ে ৩৭তম এবং পরিকল্পনা বিভাগ ৭৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪৮তম স্থানে রয়েছে।

অপর বড় মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের মধ্যে সেতু বিভাগ ৯৩ দশমিক ১৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে ১৬তম এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৯০ দশমিক ৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২৭তম স্থানে রয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ৯৪ দশমিক ০৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ১৪তম এবং জ্বালনি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৮৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৩৩তম স্থানে আছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ ৯৪ দশমিক ৩২ শতাংশ নম্বর পেয়ে ১৭তম এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ৮৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৩৪তম স্থান পেয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ৯০ দশমিক ১৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২৮তম এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৮৮ দশমিক ১৬ নম্বর পেয়ে ৩৫ নম্বর স্থানে রয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৯৩ দশমিক ৯০ নম্বর পেয়ে ১৫তম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৯২ দশমিক ৯০ নম্বর পেয়ে ১৯তম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৯১ দশমিক ৯৩ নম্বর পেয়ে ২২তম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ৯১ দশমিক ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২৩তম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৯০ দশমিক ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২৫তম, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ৯০ দশমিক ৮০ নম্বর পেয়ে ২৬তম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ৮৯ দশমিক ৬০ নম্বর পেয়ে ৩০তম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৭ দশমিক ১৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৩৬তম, ভূমি মন্ত্রণালয় ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪০তম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪১তম, শিল্প মন্ত্রণালয় ৮৩ দশমিক ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪২তম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪৫তম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪৬তম, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৭৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪৭তম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ৭২ দশমিক ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৪৯তম এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ৬৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে ৫০তম স্থানে রয়েছে।

এপিএ মূল্যায়ন প্রসঙ্গে যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ ভূঞা বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে এপিএ প্রণয়নের সময় কভিড-১৯ মহামারি ছিল। এ কারণে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ মহামারির প্রভাব ও ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে নিজ নিজ এপিএতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সে অনুযায়ী সূচক বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তলানিতে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং সচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজাকে কয়েক দফা ফোন করা হলে রিসিভ হয়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় আনার লক্ষ্যে বার্ষিক চুক্তিভিত্তিক কর্মমূল্যায়ন পদ্ধতির একটি খসড়া ২০১৮ সালে প্রণয়ন করা হয়। সেটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুও হয়েছিল। কিন্তু সেটি পুরোপুরি শুরু করা হয়নি। বার্ষিক চুক্তিভিত্তিক কর্মমূল্যায়নের এই আধুনিক পদ্ধতিটি চালু হওয়া অপরিহার্য। তাহলে এ ধরনের মূল্যায়ন বস্তুনিষ্ঠ হবে। সূত্র: সমকাল

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত