পুলিশের ৬৫ হাজার সদস্য কমিউনিটি ব্যাংকের ঋণ পেয়েছেন

| আপডেট :  ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫০  | প্রকাশিত :  ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫০

মসিউল হক চৌধুরী। দায়িত্ব পালন করছেন কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির যাত্রা ২০১৯ সালে। করোনাসৃষ্ট মানবিক ও আর্থিক দুর্যোগের মধ্যেও গত দুই বছরে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়েছে ব্যাংকটি। এ সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন।

আনুষ্ঠানিক যাত্রার দুই বছরে কমিউনিটি ব্যাংক কতটুকু এগোল?
গত দুই বছর গোটা বিশ্ব এক নজিরবিহীন মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে পার করেছে। কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বয়স সব মিলিয়ে ২৭ মাস। আমরা কার্যক্রম শুরুর তিন মাসের মধ্যেই নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তার পরও বিপত্সংকুল এ সময়ে আমরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাফল্য পেয়েছি। মহামারী না হলে হয়তো আমরা আরো বেশি বড় ও বিস্তৃত হতে পারতাম। সেটি হলে হয়তো সূচনালগ্নে ব্যাংকের ভিত এতটা শক্তিশালী না-ও হতে পারত। দুর্যোগের মধ্যে বেড়ে ওঠায় আমরা শক্তিশালী একটি ভিত্তি তৈরি করতে পেরেছি। যে ভিত তৈরি হয়েছে, তার ওপর ভর করে কমিউনিটি ব্যাংক বহুদূর পাড়ি দিতে পারবে।

বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কমিউনিটি ব্যাংক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। আমাদের ঝুলিতে জমা হয়েছে তিনটি পুরসড়ার। ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমরা দেশের ৬৪ জেলায় এ কমিউনিটি ব্যাংকের সেবার বিস্তৃতি ঘটাতে পেরেছি। বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি গর্বিত সদস্যের বেতন-ভাতা এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হচ্ছে। শুরুতে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে সেবা নিয়ে কিছু অভিযোগ ছিল। কিন্তু এখন পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত আনন্দচিত্রে কমিউনিটি ব্যাংকের সেবা নিচ্ছেন।

মাত্র ১৮টি শাখা নিয়ে সারা দেশে কীভাবে সেবা দিচ্ছেন?
দেশের সব জেলাতেই পুলিশ লাইন আছে। সেখানে আমরা উপশাখার চেয়েও ছোট আকারের সার্ভিস সেন্টার খুলে দিয়েছি। দু-তিনটি এটিএম বুথ আর দু-একজন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সার্ভিস সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। সেখান থেকে টাকা জমা ও উত্তোলন সুবিধার পাশাপাশি ঋণও বিতরণ হচ্ছে। দেশজুড়ে আমাদের ১৮টি শাখা। এর মধ্যে ছয়টি ঢাকায় ও দুটি চট্টগ্রামে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাম ও শহরভিত্তিক নীতিমালা আমলে নিয়েই আমরা শাখাগুলো চালু করেছি। তবে এরই মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংকের ১১৮টি এটিএম বুথ চালু হয়েছে। তবে আমরা শুধু পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের ব্যাংক হতে চাই না। সারা দেশের সব মানুষের ব্যাংক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

সূচনালগ্ন থেকে আপনাদের কার্যক্রমগুলো জানতে চাই।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর কমিউনিটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সিবিএসের জন্য চুক্তি করার মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে আমরা কার্যক্রম শুরু করি। দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলো যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে, সে কোম্পানির সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি। এরপর দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয়ার কার্যক্রমও শেষ হয়। ২০১৯ সালের ১১ সে্বেম্বর কমিউনিটি ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে। সেদিনই ব্যাংকের করপোরেট শাখার কার্যক্রম শুরু হয়। এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য আমাদের ব্যাংকের গ্রাহক হয়েছেন। ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর আমরা ‘কমিউনিটি ক্যাশ’ নামে একটি সেলফোন অ্যাপ্লিকেশন চালু করি। অ্যাপটি ব্যবহার করে গ্রাহকরা ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল টপআপসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেনদেন সম্পন্ন করছেন। একই বছরের ২ ডিসেম্বর আমরা একটি কল সেন্টার চালু করেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি ব্যাংক যত ধরনের সেবা ও সুযোগ-সুবিধা সমৃ” হওয়া দরকার, তার প্রতিটিই চালু করা হয়েছে। এডি শাখা ও নস্ট্র হিসাব চালুর মাধ্যমে কমিউনিটি ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যও শুরু করেছে। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্য ও সাধারণ মানুষ কমিউনিটি ব্যাংকের গ্রাহক হচ্ছেন।

কমিউনিটি ব্যাংকের ব্যালান্স শিট কতটা বড় হলো?
এরই মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংকে গ্রাহকদের ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার আমানত জমা হয়েছে। এ আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রিটেইল। আমরা বাংলাদেশ পুলিশের ৬৫ হাজার সদস্যকে ঋণ দিয়েছি। গড়ে ৪ লাখ টাকা করে দেয়া এ ঋণ পোর্টফোলিওর আকার ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের বেতনের বিপরীতে এ ঋণ দেয়া হচ্ছে। ৫ থেকে ১০ বছর মেয়াদি এ ঋণ নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জন্য গাড়ি কেনাসহ অন্য প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। আমাদের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় শতভাগই আদায় হচ্ছে। ফলে কমিউনিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং দীর্ঘমেয়াদে ‘এ’ এবং স্বল্পমেয়াদে ‘এসটি-এ’। দেশের অনেক বড় ব্যাংকও এ রেটিং পায়নি।

ভবিষ্যতে কমিউনিটি ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও কীভাবে সাজাতে চান?
আমরা সব ধরনের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা তৈরির কাজ করছি। তবে গৃহঋণসহ রিটেইল ঋণে আমরা শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাই। একই সঙ্গে কৃষি ও সিএসএমই খাতে ঋণ বিতরণের প্রডাক্ট ও প্লাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের ইকোসিস্টেম দাঁড় করানো হচ্ছে। কমিউনিটি ব্যাংকের ৯৯ শতাংশ লেনদেনই ডিজিটাল। ব্যাংকের পরিধি বড় করার সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয় রাখতে চাই। তবে করপোরেট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও আমরা একেবারে কৃপণ হব না। সহনশীলতা ও স্থিতিশীল ব্যাংকিংয়ে জোর দিয়ে আমরা সম্প্রসারিত হচ্ছি। কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ করপোরেট সুশাসনে যেকোনো ধরনের ছাড় দেয়ার বিরোধী।

সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনাদের কর্মসূচি কী?
কমিউনিটি ব্যাংকের স্লোগান হলো ‘আস্থা, নিরাপত্তা ও প্রগতি’। এ স্লোগান ও ব্যাংকের নাম আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের কানে পৌঁছাতে চাই। আনুষ্ঠানিক যাত্রার প্রথম দিন থেকেই আমরা করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করেছি। স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে পথচলা আমাদের লক্ষ্য। আমরা জনগণকে এ বার্তা দিতে চাই যে তাদের প্রতিটি অর্থ কমিউনিটি ব্যাংকে নিরাপদ থাকবে। যুগোপযোগী ব্যাংকিং সেবা ও পণ্য নিয়ে আমরা গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে চাই। উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করতে পারলে সাধারণ মানুষ নিজ থেকেই কমিউনিটি ব্যাংকে আসবে। শাখা স্থাপনের ক্ষেত্রেও আমরা গণমানুষের কাছে থাকার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা সীমাহীন সহযোগিতা পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের জন্য ব্যাংক দিয়েছেন। আর গভর্নর মহোদয় কমিউনিটি ব্যাংকের অভিভাবকত্ব করছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকেও আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি।

সূত্র: বণিক বার্তা

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত