সুষ্ঠু ভোট হবে তো?

| আপডেট :  ১৪ জুন ২০২২, ০৮:০০  | প্রকাশিত :  ১৪ জুন ২০২২, ০৮:০০

জমজমাট প্রচার-প্রচারণা শেষ। আগামীকাল বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) ভোট। প্রায় দুই সপ্তাহের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পর গতকাল সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয় নির্বাচনী প্রচারণা। এতদিন উৎসবের পরিবেশ বজায় থাকলেও শেষ দু’দিনে নানা সংশয় ভর করেছে সাধারণ ভোটারদের মনে। সবার মনে প্রশ্ন একটিই- সুষ্ঠু ভোট হবে তো?

এখন আলোচনা একটাই- ভোটে জিতে সাবেক মেয়র বিএনপি থেকে বহিস্কৃৃত মনিরুল হক সাক্কু হ্যাটট্রিক করবেন; নাকি নতুন মুখ নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বিজয়ের মালা গলায় পরবেন? এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা ও আলোচনায় সরব কুমিল্লা নগরী।

নানা শঙ্কার মাঝে এবারের ভোট উৎসবে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন সদর আসনের এমপি হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সোমবার কুমিল্লায় এসে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।’ অপর কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘ভোট-সংশ্নিষ্ট ব্যক্তি ও ভোটার ছাড়া পেশিশক্তি দেখিয়ে কেউ বুথে প্রবেশ করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে।’
এদিন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ বিষয়ে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রে কোনো সহিংসতা হলে ভোট বাতিলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দুই নির্বাচন কমিশনার। এদিকে সুষ্ঠু ভোটের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ৫০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মাঠে থাকবে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।

গত ২৭ মে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর শুরু হয় নির্বাচনী প্রচার। শেষ সময়ে এসে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণায় ভোটের মাঠ সরগরম হয়ে ওঠে। নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী থাকলেও নৌকার প্রার্থী রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তাঁদের নানা বক্তব্য ভোটের মাঠে বেশ উত্তাপ ছড়ায়। তবে নগর উন্নয়নে তাঁদের বক্তব্যে ছিল বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী রিফাত তাঁর প্রচারণায় সাক্কুকে ব্যর্থ মেয়র ও দুর্নীতিবাজ বলে দাবি করেছেন। নিজে নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেন রিফাত। একই ধরনের বক্তব্য নিয়ে ভোটের মাঠে সরব ছিলেন অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার। বিপরীতে সাক্কু তাঁর প্রচারণায় দুই মেয়াদে ১০ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন এবং তাঁর আগের ইশতেহারের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করেন।

গতকাল কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘আইনের কিছু ফাঁকফোকর ব্যবহার করে সংসদ সদস্য বাহার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থান করছেন। আমাদেরও সময় আসবে। ওয়েট অ্যান্ড সি।’ এ সময় কমিশনার আহসান হাবিব সরকারদলীয় ওই এমপির উদ্দেশে বলেন, ‘আইনপ্রণেতা হয়ে আপনি নিজেই ব্যর্থ হলেন। এর পর কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে উদাহরণ হিসেবে নেবে বাংলাদেশের মানুষ। যেখানে ভোটের পরিবেশ ভালো থাকবে না, সেই কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

এর আগে সকালে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিংয়ে আহসান হাবিব বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের হাঙ্গামা বরদাশত করা হবে না। এ কমিশন কুমিল্লায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে।

আহসান হাবিব বলেন, এ নির্বাচন নতুন কমিশনের প্রথম ভোট। এ নির্বাচনের দিকে সবাই চেয়ে আছে। আমাদের দায়িত্ব অনেক। অনেক প্রার্থীই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু কুমিল্লায় একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে চাই। এ জন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কেউ অনিয়মে জড়িত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী যদি মনে করেন, কেন্দ্রে সহিংসতা করে বিজয়ী হবেন; তাহলে ওই প্রার্থীর ভোটকেন্দ্রে না যাওয়াটাই ভালো। সুষ্ঠু ভোটের জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারসহ মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ :নির্বাচনে বহিরাগত ও সন্ত্রাসীদের মহড়া রোধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন। গতকাল তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপিটি জমা দেন। স্মারকলিপিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, অলিগলিতে মহড়া দিচ্ছে ক্যাডাররা। বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামিরাও প্রকাশ্যে আসছে। এতে ভোটারদের মাঝে ভয় ও শঙ্কা বাড়ছে। এ ছাড়াও ইভিএমে ফলাফল কারচুপি রোধে সব বুথের সম্মিলিত প্রিন্ট কপি পোলিং এজেন্টকে সরবরাহ করার আবেদন করেন তিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রার্থীদের শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
এখানে ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট হবে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দু’জন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট হবে। এখানে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন প্রার্থী লড়াই করছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত