৮৫ শতাংশ স্কুল কলেজ ব্যবহার অনুপযোগী

বন্যায় ১৮ জেলায় প্লাবিত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ শতাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত আবার কোনোটি অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বন্যার পানি নেমে গেলেই বন্যাকবলিত এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, উল্লিখিত জেলাগুলোর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি স্কুলও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কতটি আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত, সেই তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। একইভাবে মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানও পাওয়া যায়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বন্যাকবলিত জেলাগুলো থেকে এখনো পুরোপুরি বানের পানি নেমে যায়নি। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার উপযোগী করতে কত টাকা বা সেখানে আর্থিক ক্ষতি কত, সেই তথ্য এখনো পাইনি। তবে সম্ভাব্য ক্ষতির বিবরণী জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী শাহ নইমুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য দুই-তিন দিনের মধ্যে পাওয়া যাবে। সাধারণ সংস্কার খাত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়ার পর বোঝা যাবে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন হবে কি না।
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) উপপরিচালক নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছিল। তবে এরপরও কিছু প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেড় হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে বন্যার পানি তেমন ক্ষতি করতে পারেনি। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালানো হয়েছে। বন্যায় আর্থিক ক্ষতির বিবরণী এখনো তারা প্রস্তুত করেননি বলে জানান।
মাউশির তথ্য অনুযায়ী, ৯টি শিক্ষা অঞ্চলের ১৮টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। তবে এসব জেলার মধ্যে মাত্র ৮৬ উপজেলায় পানি ওঠে। সবচেয়ে বেশি সিলেট সদর জেলায় ১৩টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়। এছাড়া সুনামগঞ্জে ১১ ও নেত্রকোনায় ১০ উপজেলা ও কুড়িগ্রামে ৮টি পানির নিচে চলে যায়। এসব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়। অন্য জেলাগুলোয় ১ থেকে ৫টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে।
জানা যায়, ১৮ জেলায় বন্যাকবলিত হয় ১ হাজার ৮৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৮ ছাত্রছাত্রীর লেখাপড়া বিঘ্নিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯১৭টি বা প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী। ১২১টি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার উপযোগী। যদিও কমবেশি সংস্কার করতে হবে। এছাড়া ১০২টি আংশিক ব্যবহার অনুপযোগী। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ায় এসব কেন্দ্র থেকে অনেকেই নিজের বাসাবাড়িতে ফিরেছেন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের এই চিত্র বেশি। কিন্তু সিলেট অঞ্চলের বেশির ভাগ স্থান এখনো পানির নিচে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করে। এ সংখ্যা তিন জেলায় ৪১৪টি।
অন্যদিকে ডিপিইর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। কিন্তু কতটি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই তথ্য পানি নেমে না যাওয়া পর্যন্ত জানা সম্ভব হবে না। তবে ১৩৫১টি স্কুল আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তাদের তথ্যমতে, বন্যাকবলিত জেলায় ১৩৪ উপজেলার স্কুল বর্তমানে বন্ধ আছে। এ তালিকায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার যুক্ত হয়েছে ফেনীর ফুলগাজী আর মানিকগঞ্জের দৌলতপুর। এসব উপজেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কেননা বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের কাছে লেখাপড়ার চেয়ে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম বড় হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারি সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মাসের মধ্যে আক্রান্ত জেলা-উপজেলার প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের বন্যার পানি নেমে যাবে। পানি নেমে গেলেই লেখাপড়া শুরু করা যাবে না দুই কারণে-প্রথমত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের প্রয়োজনীয় দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ঈদুল-আজহার ছুটি শুরু হয়ে যাবে। আবার ঈদের ছুটি ১৭ জুলাই পর্যন্ত চলবে। সেই হিসাবে বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরা এক মাসের বেশি লেখাপড়া থেকে দূরে থাকছে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত